বাংলাদেশ মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাকস্বাধীনতার নতুন বাঁক, ফেসবুককে ‘ঘোল খাওয়াচ্ছে’ মিম!

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম

বাকস্বাধীনতার নতুন বাঁক, ফেসবুককে ‘ঘোল খাওয়াচ্ছে’ মিম!

ইসরাইল নিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক কিছু লিখলে ব্লক কিংবা স্ট্রাইকের শিকার হতে হচ্ছে। এই আঘাতের জবাব দিতে মিমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন গ্রাহকরা।ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে চলমান গণহত্যা বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিলেও কয়েকটি শক্তিধর দেশ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইসরাইলের এই হত্যাযজ্ঞের তাবেদারি করেই যাচ্ছে।

 করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মার্ক জাকারবার্গের মেটার অন্তর্ভুক্ত ফেসবুকে ইসরাইল নিয়ে নেতিবাচক কিছু লিখলে হয় পোস্ট ডিলিট করে দেয়া হচ্ছে, না হলে দেয়া হচ্ছে ব্লক কিংবা স্ট্রাইক।সচেতন মহল এটিকে বাকস্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখলেও জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠানের সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।

 মেটার এমন কর্মকাণ্ডকে পক্ষপাত দোষে দুষ্ট বলা হলেও মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাকস্বাধীনতা রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সংঘাত ছড়ায় এমন কিছুর সমর্থন ফেসবুক দিতে পারে না। এটি শুধু ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ না, বিশ্বের যেকোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে মেটা একই নীতি অনুসরণ করে চলে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামাজিক মাধ্যমটি।গত বছর অক্টোবরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ইসরাইলে রকেট হামলা চালানোর পর ফেসবুক সংগঠনটিকে ‘ভয়ংকর সংগঠন’ নামে অ্যাখ্যা দেয়। হামাসের পক্ষ হয়ে কোনো পোস্ট দেয়া হলে সেটি ডিলিট করে দিচ্ছে ফেসবুক। 
গ্রাহকরা বলছেন, মেটা নির্লজ্জ্বভাবে ইসরাইলের তাবেদারি করছে, যা নজিরবিহীন।

 শুধু পোস্ট ডিলিট করেই ক্ষান্ত হয়নি ফেসবুক, ফিলিস্তিনের সাংবাদিক থেকে শুরু বিশ্বের অনেক মানবতাবাদীর অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে। এদের অপরাধ ছিল ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে আওয়াজ তোলা।এ প্রসঙ্গে ফিলিস্তিনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মোনদোইসি এক্সে অভিযোগ জানিয়ে এক মাইক্রোব্লোগ পোস্টে বলছে, অনেক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে মেটার প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। মূলত ফিলিস্তিনের সত্য ঘটনা যাতে বিশ্ববাসীর সামনে কেউ উপস্থাপন করতে না পারে সেজন্যই এমন করছে জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান।

 এতকিছুর পরেও গণহত্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে কোনোভাবেই যেন ফেসবুকের গ্রাহকদের থামানো যাচ্ছে না। বাকস্বাধীনতা প্রকাশে মিমকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। মিমের মাধ্যমে মেটা এবং ইসরাইলকে তুলোধুনা করা হচ্ছে।মিম শুধু রসাত্মক ছবি বা ভিডিও ক্লিপের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দিনকে দিন প্রতিবাদের খোরাকে রূপ নিয়েছে। অনেকে বলছেন, বাস্তব দুনিয়ার দেয়াল লিখন বা গ্রাফিতিই যেন মিম রূপে ডিজিটাল দুনিয়ায় আভির্ভূত হয়েছে।

 এ প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কানাডার মিমার জেগ বালিংগাল বলেন, দিনকে দিন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষের কাছে তুচ্ছ হয়ে পড়েছে। মূলত স্বার্থ রক্ষা করে খবর প্রকাশের এই দৌড়ে একদিকে মিডিয়া যেমন সাংবাদিকতকা নষ্ট করছে, অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সাধারণ মানুষের টুটি চেপে ধরেছে। এখন সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে মিম রূপ নিয়েছে এক রকমের অধিকার আদায়ের হাতিয়ারে।
 যুক্তরাষ্ট্রের সোয়াথমোর কলেজের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক কিরবি কনরোড মিমের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ছোট ছোট শব্দের মাধ্যমে দ্ব্যর্থক রসিকতা ব্যাপক হারে প্রকাশ করাই হচ্ছে মিমের উদ্দেশ্য। বিজ্ঞাপনের কয়েক সেকেন্ডের সুর যেমন মানুষের মগজে গেঁথে থাকে, বারবার একই মিম তেমনি মানুষের প্রতিদিনকার ভার্চুয়াল জগতের বিনোদনের খোরাকে পরিণত হয়।বিশেষ করে সম্প্রতি ইসরাইলে ইরানের ড্রোন হামলা নিয়ে ‍‍`ঈদ মোবারক‍‍` মিমটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইসরাইলে ইরান বোমা হামলা করার পর ড্রোন এবং এরসঙ্গে ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনির ছবি দিয়ে ঈদ মোবারক ক্যাপশনের মিম মানে হচ্ছে, রোজার পরপর ইসরাইলের ওপর এই প্রতিশোধ মুসলানদের ঈদের আনন্দের মতো।

 কনরোড বলেন, মিম হচ্ছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কোনো বিষয়ের প্রতি ইশারা-ইঙ্গিতের খেলা। সামনাসামনি বন্ধুরা যেমন চোখের ইশারায় ভেতরকার কোনো রসিকতার প্রতি ইঙ্গিত দিতে পারে তেমনি মিমের মাধ্যমে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে নিজেদের রসিকতা চালিয়ে নেয়া যায়। এতে করে একদিকে যেমন কমিউনিটি গাইডলাইন ভাঙার কোনো ঝামেলা থাকে না, অন্যদিকে সরাসরি না বলায় স্পষ্টভাবে এটি কোনো হেইটস্পিচ কিনা সেটিও নির্ধারণ করা যায় না।

 কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক জরিপে দেখা যায়, ইসরাইল কেন্দ্রিক ইতিবাচক যেকোনো পোস্ট ফেসবুকে যেভাবে গ্রহণ করে এবং রিচ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে, ইসরাইল নিয়ে নেতিবাচক পোস্টের ক্ষেত্রে ঠিক বিপরীতমুখী আচারণ করে ফেসবুক। শুধু পোস্ট না একজন ফিলিস্তিনি বাসিন্দার অ্যাকাউন্ট যে পরিমাণে নজরদারিতে থাকে তার তুলনায় একজন ইসরাইলের নাগরিকের অ্যাকাউন্ট প্রায় শতভাগ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে।মেটা যখন প্রতিবাদের কণ্ঠ আড়ষ্ট করে দিচ্ছে, ইসরাইল নিয়ে কিছু লিখতে হলে থাকতে হচ্ছে নজরদারির মধ্যে, তখন মিম হয়ে উঠছে প্রতিবাদের ভাষা, রুখে দাঁড়ানোর হাতিয়ার। আর তাইতো সরাসরি প্রতিবাদে না গিয়েও মিমের মাধ্যমে ইসরাইলের এই গণহত্যার সমালোচনার জবাব দিচ্ছে মানবতাবাদী মানুষেরা।

Link copied!

সর্বশেষ :