বাংলাদেশ মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষবরণের মহাউৎসবের জন্য প্রস্তুত রমনা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৪, ০৫:১২ পিএম

বর্ষবরণের মহাউৎসবের জন্য প্রস্তুত রমনা

বাঙালি সংস্কৃতির মহাউৎসব পহেলা বৈশাখ। সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষের মহামিলন ঘটে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে। এদিন সাজ সাজ রবে পুরো বাংলাদেশ ঢেকে যায় উৎসবের চাদরে। রমনার বটমূল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সঙ্গে যেন এই উৎসবের অন্যরকম তাৎপর্যপূর্ণ একটি সম্পর্ক রয়েছে। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে রমনার বটমূল।

পহেলা বৈশাখের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে রমনার বটমূল। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলা বর্ষবরণে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ও রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। বটমূলে চলছে ছায়ানটের রিহার্সাল।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) রমনায় সরেজমিনে দেখা যায়, ছায়ানটের একঝাঁক শিল্পি ব্যস্ত গানের রিহার্সাল করতে। র‌্যাব এবং পুলিশের সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছেন শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মহড়া চলছে বটমূল প্রাঙ্গণে। সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে পুরো রমনা পার্কসহ আশপাশের এলাকাগুলো। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন আগামীকাল যেন জনসাধারণ নির্বিঘ্নে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারেন।রমনার বটমূল প্রাঙ্গনের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আয়োজিত উৎসবে নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

 

বর্ষবরণ ঘিরে হামলার শঙ্কা নেই জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, 

 

‘পহেলা বৈশাখের উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ, কিন্তু সেই আয়োজনে অতীতে হামলা হয়েছে। তাই নিরাপত্তার জন্য আমরা শতভাগ প্রস্তুত রয়েছি। তবে সন্ধ্যার আগে সব অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে।’
 

তিনি বলেন, সারা দেশের মানুষ পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। রাজধানীতে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন আয়োজন করবে। যেসব জায়গায় প্রোগ্রাম হচ্ছে, ডিএমপির পক্ষ থেকে সেসব জায়গা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ডিবি, এসবিসহ গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
 


র‍্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, 

পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে পুলিশ, র‌্যাবসহ গোয়েন্দা বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। টিএসসি, শাহবাগ, রমনা, হাতিরঝিলসহ যেসব জায়গায় জনসমাগম হবে, সেখানে র‍্যাবের পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে।বৈশাখের অনুষ্ঠানে নারীদের হেনস্তা ঠেকানো ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে 

তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে হয়রানি, নারীদের উত্ত্যক্তের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে র‌্যাব। কারণ, প্রতিবারই জনসমাগমস্থলে নারীদের হেনস্তার ঘটনা ঘটে। এ জন্য ইভটিজিং রোধে র‌্যাবের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন,

বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে জঙ্গি হামলার কোনো আশঙ্কা নেই। তারপরও জঙ্গিদের যে কোনো তৎপরতা নস্যাৎ করে দিতে র‍্যাব প্রস্তুত রয়েছে। ভার্চুয়াল জগতে কেউ যেন কোনো গুজব রটাতে না পারে, সে জন্য র‍্যাবের সাইবার টিম সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে।

এদিকে শেষ সময়ের রিহার্সেলে ব্যস্ত ছায়ানটের শিল্পিরা। রাজধানীর রমনা বটমূলে প্রতিবছরের মতোই গান, কবিতা ও নানা আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করবে ছায়ানট। থাকবে শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজন। ছায়ানটের এবারের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ‘স্বাভাবিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনা’। এ অনুষ্ঠান ঘিরে তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে এখন চলছে মঞ্চ তৈরিসহ চূড়ান্ত প্রস্তুতি। রমনা পার্ক প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানস্থলের সীমারেখা টানা হচ্ছে।

জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের প্রভাতে রমনার বটমূলে থাকবে ছায়ানটের ৩০টি পরিবেশনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আঁধার রজনী পোহালো’ অথবা ‘তোমার সুর শুনায়ে’র মতো জনপ্রিয় গানের সঙ্গে তারা রেখেছেন অতুলপ্রসাদের ‘ওরে বন, তোর বিজনে সঙ্গোপনে’র মতো দাদরা তালের গান। এ সবই একক সংগীত। কাজী নজরুল ইসলামের ‘নম নম নম বাংলাদেশ মম’ আর ‘আনো আনো অমৃত বারি’র পাশাপাশি থাকবে নিশিকান্ত রায় চৌধুরীর ‘অধরা দিল ধরা এ ধুলার ধরণিতে’।

 পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নগরীতে যাতায়াত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রোববার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রমনা বটমূল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কিছু রাস্তা বন্ধ বা রোড ডাইভারশন করে দেয়া হবে।


সম্ভাব্য ডাইভারশন পয়েন্টগুলো হলো: বাংলামোটর ক্রসিং, মিন্টোরোড ক্রসিং, অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, কদমফোয়ারা ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ক্রসিং, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ভাস্কর্য ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং এবং কাঁটাবন ক্রসিং।যানবাহন চলাচলের বিকল্প রাস্তা: মিরপুর-ফার্মগেট থেকে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন বাংলামোটর-মগবাজার ক্রসিং হয়ে গন্তেব্যে পৌঁছাবে। বঙ্গবাজার-হাইকোর্ট থেকে মৎস্য ভবন অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন কদম ফোয়ারা-ইউবিএল ক্রসিং হয়ে গন্তেব্যে পৌঁছাবে। জিরো পয়েন্ট-কদম ফোয়ারা থেকে মৎস্য ভবন অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন ইউবিএল-নাইটিংগেল ক্রসিং হয়ে গন্তেব্যে পৌঁছাবে। শান্তিনগর-রাজমনি থেকে গুলিস্থান ও সদরঘাট অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন নাইটিংগেল-ইউবিএল ক্রসিং হয়ে গন্তেব্যে পৌঁছাবে।

Link copied!

সর্বশেষ :