বাংলাদেশ শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে অপহরণ চক্র, উৎস অনুসন্ধানে পুলিশ!

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৪, ১০:০৫ এএম

পাহাড়ে অপহরণ চক্র, উৎস অনুসন্ধানে পুলিশ!

কক্সবাজারে টেকনাফের পাহাড়ে ধারাবাহিক অপহরণের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ উদ্বিগ্ন। সংঘটিত একাধিক ঘটনা পর্যালোচনা করে পুলিশ বলছে, অপহরণের সংঘবদ্ধ চক্রে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে স্থানীয় লোকজনসহ অনেক জনপ্রতিনিধি। এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটলেও ভুক্তভোগীদের পরিবার থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে কৌশলে তথ্য গোপন করা, অপহরণের ঘটনা পুলিশকে না জানিয়ে গোপন রাখার চেষ্টা চলছে। এতে পুলিশকে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অপহরণের উৎস সন্ধানের চেষ্টা করছে পুলিশ।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, ‘অপহরণের পেছনে প্রকৃতপক্ষে কারা আছেন, সে বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তবে অপহৃতদের স্বজনরা তথ্য না দেয়ায় পুলিশ প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে।’


ওসি বলেন, একের পর এক এসব ঘটনা নিয়ে পুলিশ উদ্বিগ্ন। সর্বশেষ ২১ মার্চ ভোরে হ্নীলার পানখালী পাহাড়ি এলাকা থেকে পাঁচজনকে অপহরণ করা হয়। পরে ২৪ ও ২৫ মার্চ পাহাড়ি এলাকা থেকেই তাদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু উদ্ধারের আগে মুক্তিপণ দেয়ার সংবাদ পুলিশের কাছে রয়েছে। এ ব্যাপারে অপহৃতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে কিছু নাম ও ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলাও হয়েছে এবং একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে, বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফে আরও ৮ জনকে অপহরণ করে পাহাড়ে জিম্মি করা হয়েছে। টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাংস্থ ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিম পাহাড়ি এলাকা থেকে এ ৮ জনকে অপহরণ করা হয়।অপহৃতরা হলেন: হোয়াইক্যং এর করাচি পাড়া এলাকার লেদু মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া (১৫), বেলালের ছেলে  জুনাইদ (১৩), নুরুল আমিনের ছেলে সাইফুল (১৪), শহর আলীর ছেলে ফরিদ (৩৫), নাজির হোছনের ছেলে সোনা মিয়া (২৪), শহর মুল্লুকের ছেলে গুরা পুইত্যা (৩২), রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ছেলে সৈয়দ হোসেন বাবুল (৩৩) ও রইক্ষ্যং দক্ষিণ পাড়ার কালা মিয়া কালুর ছেলে ফজল কাদের (৪৭)। যাদের পরিবারকে ফোন করে এরই মধ্যে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণও চাওয়া হয়েছে।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেলে টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু আনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন দুই কৃষক। তারা হলেন: হোয়াইক্যং রোজার ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে অলি আহমদ (৩২) এবং কম্বনিয়া এলাকার ফিরুজের ছেলে নূর মোহাম্মদ (১৭)। তাদের স্বজনদের কাছ থেকেও মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর আহমদ আনোয়ারী।

পুলিশের দেয়া তথ্য বলছে, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১১ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা। 

অপহৃতদের পরিবারের তথ্য বলছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে। তবে ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে অপহৃত মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যদিও পুলিশ অপহরণের ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। পাঁচজনই রোহিঙ্গা।ওসি জানিয়েছেন, এ শিশুকে উদ্ধারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। খুব দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।

ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বেশ জটিল। অপহরণের সঙ্গে স্থানীয় অপরাধী, রোহিঙ্গা এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবার অপহৃতদের পরিবার পুলিশকে সহযোগিতা করছে না। ক্ষেত্রবিশেষে তারা তথ্য গোপন করছে। অপহরণের ঘটনা পুলিশকে না জানানোর চেষ্টা করছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ অপহরণের উৎস সন্ধানের চেষ্টা করছে।’

 


 

Link copied!

সর্বশেষ :