
ডায়েট ফলো করা মানুষের কাছে সপ্তাহে একদিনের ‘চিট মিল’ যেন উৎসবের মতো। কখনো পিজ্জা, কখনো বিরিয়ানি আবার কখনো আইসক্রিম বা হালুয়া—যা সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে এড়িয়ে চলেন, সেই খাবার খেয়েই মনকে শান্ত করেন অনেকেই।
বিশেষ করে জিমে যাওয়া তরুণ থেকে শুরু করে ওজন কমাতে ব্যস্ত কর্মজীবী নারী, সবাইই এখন “চিট ডে” বা “চিট মিল” শব্দটির সঙ্গে পরিচিত।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা সবার জন্য নয়
হায়দরাবাদের প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট ডা. সুধীর কুমার সতর্ক করে বলেছেন—
চিট মিল সবার জন্য নয়। যাদের ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটা আসলে ‘চিট অন হেলথ’ হয়ে যেতে পারে।
গবেষণায় কী বলছে?
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ল্যাভাল-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে,
যারা সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করেন, তাদের ইনসুলিন সাড়াদান ক্ষমতা ২০% পর্যন্ত কমে যায়।
ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশন জানাচ্ছে,
উচ্চ চর্বিযুক্ত একটি মাত্র মিলের পর রক্তচাপ ৩০ মিনিটের মধ্যে ৯-১২ mmHg পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
কারা মারাত্মক ঝুঁকিতে?
ডায়াবেটিস থাকলে অতিরিক্ত চিনি বা কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা অতিরিক্ত লবণ বা তেলযুক্ত খাবার খেলে রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে, যা স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
স্থূলতা থাকলে একবেলার খাবারেই ১-২ হাজারের বেশি ক্যালরি জমে গিয়ে ওজন কমানোর পুরো প্রক্রিয়াটাই ব্যাহত হতে পারে।
কিডনি সমস্যায় ভুগলে, অতিরিক্ত সোডিয়াম কিডনির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে এবং ফ্লুইড রিটেনশন (শরীর ফুলে যাওয়া) বাড়িয়ে দিতে পারে।
সাইকোলজিস্টরা বলছেন, বারবার চিট মিল খেলে অনেকের মনে “খাবার মানেই পুরস্কার” ধরনের এক ধরনের ইমোশনাল ডিপেনডেন্সি তৈরি হয়।
পরের দিন শুরু হয় অপরাধবোধ—“কাল এত খেলাম, আজ কিছুই খাব না”—এতেই তৈরি হয় অস্বাস্থ্যকর ইটিং প্যাটার্ন।
নিরাপদে ‘চিট মিল’ উপভোগ করতে বিশেষজ্ঞদের ৫ পরামর্শ
1.একই দিনে কার্ব, ফ্যাট আর সুগার—সব একসঙ্গে নয়
2.চিট মিল নয়, চিট স্ন্যাকস করুন (যেমন ছোট কেক বা ২ টুকরো কাবাব)
3.শরীরচর্চার পর খেলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেশি থাকে
4.আগের মিল কমিয়ে ক্যালরি ব্যালান্স রাখুন
5.শরীরে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা লক্ষ্য করুন (ঘুম পায়? ফুলে যাচ্ছেন? সারা শরীর ভারী? তাহলে বুঝবেন সেটি আপনার জন্য নয়)
শেষকথা
চিট মিল হতে পারে মন ভালো রাখার একটি উপায়, তবে সেটি যেন “একবেলার আনন্দ, সাতদিনের ক্ষতি” না হয়ে যায়।
যাদের শরীর সুস্থ, তাদের জন্য এটা মোটিভেশন হতে পারে। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড প্রেসার আছে, তাদের জন্য এটা হতে পারে বিপদের ঘণ্টা।
তাই সিদ্ধান্ত নিন নিজের শরীরের সঙ্গে পরামর্শ করে, ট্রেন্ড দেখে নয়।
বিষয় : চিট মিল ডায়েট স্বাস্থ্যঝুঁকি শারীরিক সমস্যা
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ডায়েট ফলো করা মানুষের কাছে সপ্তাহে একদিনের ‘চিট মিল’ যেন উৎসবের মতো। কখনো পিজ্জা, কখনো বিরিয়ানি আবার কখনো আইসক্রিম বা হালুয়া—যা সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে এড়িয়ে চলেন, সেই খাবার খেয়েই মনকে শান্ত করেন অনেকেই।
বিশেষ করে জিমে যাওয়া তরুণ থেকে শুরু করে ওজন কমাতে ব্যস্ত কর্মজীবী নারী, সবাইই এখন “চিট ডে” বা “চিট মিল” শব্দটির সঙ্গে পরিচিত।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা সবার জন্য নয়
হায়দরাবাদের প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট ডা. সুধীর কুমার সতর্ক করে বলেছেন—
চিট মিল সবার জন্য নয়। যাদের ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটা আসলে ‘চিট অন হেলথ’ হয়ে যেতে পারে।
গবেষণায় কী বলছে?
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ল্যাভাল-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে,
যারা সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করেন, তাদের ইনসুলিন সাড়াদান ক্ষমতা ২০% পর্যন্ত কমে যায়।
ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশন জানাচ্ছে,
উচ্চ চর্বিযুক্ত একটি মাত্র মিলের পর রক্তচাপ ৩০ মিনিটের মধ্যে ৯-১২ mmHg পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
কারা মারাত্মক ঝুঁকিতে?
ডায়াবেটিস থাকলে অতিরিক্ত চিনি বা কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা অতিরিক্ত লবণ বা তেলযুক্ত খাবার খেলে রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে, যা স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
স্থূলতা থাকলে একবেলার খাবারেই ১-২ হাজারের বেশি ক্যালরি জমে গিয়ে ওজন কমানোর পুরো প্রক্রিয়াটাই ব্যাহত হতে পারে।
কিডনি সমস্যায় ভুগলে, অতিরিক্ত সোডিয়াম কিডনির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে এবং ফ্লুইড রিটেনশন (শরীর ফুলে যাওয়া) বাড়িয়ে দিতে পারে।
সাইকোলজিস্টরা বলছেন, বারবার চিট মিল খেলে অনেকের মনে “খাবার মানেই পুরস্কার” ধরনের এক ধরনের ইমোশনাল ডিপেনডেন্সি তৈরি হয়।
পরের দিন শুরু হয় অপরাধবোধ—“কাল এত খেলাম, আজ কিছুই খাব না”—এতেই তৈরি হয় অস্বাস্থ্যকর ইটিং প্যাটার্ন।
নিরাপদে ‘চিট মিল’ উপভোগ করতে বিশেষজ্ঞদের ৫ পরামর্শ
1.একই দিনে কার্ব, ফ্যাট আর সুগার—সব একসঙ্গে নয়
2.চিট মিল নয়, চিট স্ন্যাকস করুন (যেমন ছোট কেক বা ২ টুকরো কাবাব)
3.শরীরচর্চার পর খেলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেশি থাকে
4.আগের মিল কমিয়ে ক্যালরি ব্যালান্স রাখুন
5.শরীরে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা লক্ষ্য করুন (ঘুম পায়? ফুলে যাচ্ছেন? সারা শরীর ভারী? তাহলে বুঝবেন সেটি আপনার জন্য নয়)
শেষকথা
চিট মিল হতে পারে মন ভালো রাখার একটি উপায়, তবে সেটি যেন “একবেলার আনন্দ, সাতদিনের ক্ষতি” না হয়ে যায়।
যাদের শরীর সুস্থ, তাদের জন্য এটা মোটিভেশন হতে পারে। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড প্রেসার আছে, তাদের জন্য এটা হতে পারে বিপদের ঘণ্টা।
তাই সিদ্ধান্ত নিন নিজের শরীরের সঙ্গে পরামর্শ করে, ট্রেন্ড দেখে নয়।
[277]
আপনার মতামত লিখুন