দৈনিক প্রথম সংবাদ

অতিথি আপ্যায়ন এবং ভদ্র আচরণ

অতিথি আপ্যায়ন এবং ভদ্র আচরণ

পরিবারে অতিথি আসা শুধুমাত্র একটি সামাজিক অনুষ্ঠান নয়। এটি শিশু এবং পরিবারের সকল সদস্যকে ভদ্রতা, শিষ্টাচার এবং আন্তরিকতা শেখার সুযোগ দেয়। বিশেষ করে ছোটরা, যারা এখনই সামাজিক আচরণ শেখার পর্যায়ে আছে, তাদের জন্য এটি একটি শিক্ষার মঞ্চ।

শিশুদের শেখানো উচিত শান্ত থাকা এবং ভদ্র আচরণ দেখানো। ঘরে দৌড়ঝাপ বা চিৎকার করা এড়ানো, অতিথি স্বাগত জানালে নম্রভাবে হাত নাড়া বা “হ্যালো” বলা। এছাড়াও, নিজের খেলনা বা ব্যক্তিগত জিনিস মেহমানের কাছে না নেওয়া উচিত। ছোটখাটো সাহায্য যেমন চায়ের গ্লাস বা প্লেট পৌঁছে দেওয়া শিশুদের দায়িত্বশীলতা শেখায়। মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহার সীমিত রাখা তাদের মনোযোগ ভদ্র আচরণের দিকে রাখে। বড় বা বৃদ্ধ অতিথির সম্মান দেখানো তাদের সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে।

পরিবারের প্রস্তুতি

দাওয়াতকে নির্বিঘ্ন ও আনন্দময় করতে পরিবারের কিছু প্রস্তুতি অপরিহার্য।

রান্না আগে শেষ করা: কোরমা বা কাচ্চি আগে থেকে মেরিনেট করে ফ্রিজে রাখা।

হালকা এপেটাইজার: অতিরিক্ত আইটেম না রেখে হালকা খাবার রাখা।

পানীয়: কোকের পরিবর্তে বরহানি বা জিরা পানি।

খাবারের পরে ফল না দেওয়া: বদহজম এড়াতে।

ঘর ও সাজসজ্জা: আগেভাগে ঘর পরিষ্কার ও সজ্জিত রাখা।

নামাজ ও গোসল: অতিথি আগমনের সময় অনুযায়ী সম্পন্ন করা।

চেকলিস্ট ব্যবহার: ভুল কমানোর জন্য কাজের তালিকা।

এই প্রস্তুতি হোস্ট এবং অতিথি উভয়ের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে।

এড়ানো উচিত এমন অভ্যাস

কিছু অভ্যাস অতিথি আপ্যায়নকে অপ্রফেশনাল বা অস্বস্তিকর করে তোলে।

  • মেহমান বসিয়ে রান্না করা।

  •  নিজের খাওয়ার সময় মেহমানকে অপেক্ষায় রাখা

  • খাবারের পরে ফল কেটে দেওয়া বা অপ্রয়োজনীয় পানীয় দেওয়া।

অতিথি হিসেবে করণীয়

  • সময়মত উপস্থিত হওয়া এবং চলে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো না করা।

  • হাসিমুখে স্বাগত ও বিদায় নেওয়া।
    মোবাইল ব্যবহার সীমিত রাখা।

  • হোস্টের সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা।

  • অতিরিক্ত পছন্দ-অপছন্দ দেখানো এড়ানো।

শিশুদের শিক্ষা

দাওয়াতের সময় শিশুদের শেখানো যেতে পারে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা এবং ধৈর্য শিখতে হয়

  • গল্প বলার সময় মনোযোগ দিয়ে বসে থাকা।

  • খেলার সময় হঠাৎ ছুটে না যাওয়া।

  • বড়দের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা।

  • ছোট সাহায্য করা, যেমন প্লেট পৌঁছে দেওয়া।

সম্পর্ক ও ভদ্রতার শিক্ষা

দাওয়াত কেবল খাওয়ার অনুষ্ঠান নয়, এটি পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের শিক্ষা। অতিথি-বাড়ির আনন্দ এবং সম্পর্কের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ভদ্রতা, আন্তরিকতা এবং ধৈর্য অপরিহার্য।

  • মুখে হাসি, চোখে সদয় দৃষ্টি রাখুন।

  • পরিবারে সকলের জন্য সমান মনোযোগ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করুন।

  • অতিথির আগমনের সময় সকলের প্রস্তুতি দেখুন।

ছোট টিপস

শিশুদের গল্প ও খাবারের সময় উদাহরণ দিয়ে শেখান।
অতিথি আসার সময় আগে থেকেই পেট ঠিক রাখুন।
দাওয়াতের আনন্দ সকলের জন্য সমান ভাগে ভাগ করুন।
অতিরিক্ত খোঁচা বা তামাশা এড়ান, কারণ আপনার হাসি অন্যের জন্য বেদনার কারণ হতে পারে।
খাওয়া শুরু করার আগে বীসমিল্লাহ বলুন এবং সবাইয়ের জন্য দোয়া করুন।
শেষ কথা:
অতিথি আপ্যায়ন মানেই ভদ্রতা, আন্তরিকতা এবং আনন্দময় সম্পর্ক। সঠিক প্রস্তুতি, শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ এবং আন্তরিক মনোভাব মেনে চললে দাওয়াত শুধুমাত্র খাওয়ার অনুষ্ঠান নয়, বরং শিশু ও পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হয়ে ওঠে।

বিষয় : আচরণ ভদ্রতা অতিথি আপ্যায়ন শিষ্টাচার

আপনার মতামত লিখুন

পরবর্তী খবর
দৈনিক প্রথম সংবাদ

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫


অতিথি আপ্যায়ন এবং ভদ্র আচরণ

প্রকাশের তারিখ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

featured Image

পরিবারে অতিথি আসা শুধুমাত্র একটি সামাজিক অনুষ্ঠান নয়। এটি শিশু এবং পরিবারের সকল সদস্যকে ভদ্রতা, শিষ্টাচার এবং আন্তরিকতা শেখার সুযোগ দেয়। বিশেষ করে ছোটরা, যারা এখনই সামাজিক আচরণ শেখার পর্যায়ে আছে, তাদের জন্য এটি একটি শিক্ষার মঞ্চ।

শিশুদের শেখানো উচিত শান্ত থাকা এবং ভদ্র আচরণ দেখানো। ঘরে দৌড়ঝাপ বা চিৎকার করা এড়ানো, অতিথি স্বাগত জানালে নম্রভাবে হাত নাড়া বা “হ্যালো” বলা। এছাড়াও, নিজের খেলনা বা ব্যক্তিগত জিনিস মেহমানের কাছে না নেওয়া উচিত। ছোটখাটো সাহায্য যেমন চায়ের গ্লাস বা প্লেট পৌঁছে দেওয়া শিশুদের দায়িত্বশীলতা শেখায়। মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহার সীমিত রাখা তাদের মনোযোগ ভদ্র আচরণের দিকে রাখে। বড় বা বৃদ্ধ অতিথির সম্মান দেখানো তাদের সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে।

পরিবারের প্রস্তুতি

দাওয়াতকে নির্বিঘ্ন ও আনন্দময় করতে পরিবারের কিছু প্রস্তুতি অপরিহার্য।

রান্না আগে শেষ করা: কোরমা বা কাচ্চি আগে থেকে মেরিনেট করে ফ্রিজে রাখা।

হালকা এপেটাইজার: অতিরিক্ত আইটেম না রেখে হালকা খাবার রাখা।

পানীয়: কোকের পরিবর্তে বরহানি বা জিরা পানি।

খাবারের পরে ফল না দেওয়া: বদহজম এড়াতে।

ঘর ও সাজসজ্জা: আগেভাগে ঘর পরিষ্কার ও সজ্জিত রাখা।

নামাজ ও গোসল: অতিথি আগমনের সময় অনুযায়ী সম্পন্ন করা।

চেকলিস্ট ব্যবহার: ভুল কমানোর জন্য কাজের তালিকা।

এই প্রস্তুতি হোস্ট এবং অতিথি উভয়ের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে।

এড়ানো উচিত এমন অভ্যাস

কিছু অভ্যাস অতিথি আপ্যায়নকে অপ্রফেশনাল বা অস্বস্তিকর করে তোলে।

  • মেহমান বসিয়ে রান্না করা।

  •  নিজের খাওয়ার সময় মেহমানকে অপেক্ষায় রাখা

  • খাবারের পরে ফল কেটে দেওয়া বা অপ্রয়োজনীয় পানীয় দেওয়া।

অতিথি হিসেবে করণীয়

  • সময়মত উপস্থিত হওয়া এবং চলে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো না করা।

  • হাসিমুখে স্বাগত ও বিদায় নেওয়া।
    মোবাইল ব্যবহার সীমিত রাখা।

  • হোস্টের সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা।

  • অতিরিক্ত পছন্দ-অপছন্দ দেখানো এড়ানো।

শিশুদের শিক্ষা

দাওয়াতের সময় শিশুদের শেখানো যেতে পারে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা এবং ধৈর্য শিখতে হয়

  • গল্প বলার সময় মনোযোগ দিয়ে বসে থাকা।

  • খেলার সময় হঠাৎ ছুটে না যাওয়া।

  • বড়দের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা।

  • ছোট সাহায্য করা, যেমন প্লেট পৌঁছে দেওয়া।

সম্পর্ক ও ভদ্রতার শিক্ষা

দাওয়াত কেবল খাওয়ার অনুষ্ঠান নয়, এটি পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের শিক্ষা। অতিথি-বাড়ির আনন্দ এবং সম্পর্কের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ভদ্রতা, আন্তরিকতা এবং ধৈর্য অপরিহার্য।

  • মুখে হাসি, চোখে সদয় দৃষ্টি রাখুন।

  • পরিবারে সকলের জন্য সমান মনোযোগ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করুন।

  • অতিথির আগমনের সময় সকলের প্রস্তুতি দেখুন।

ছোট টিপস

শিশুদের গল্প ও খাবারের সময় উদাহরণ দিয়ে শেখান।
অতিথি আসার সময় আগে থেকেই পেট ঠিক রাখুন।
দাওয়াতের আনন্দ সকলের জন্য সমান ভাগে ভাগ করুন।
অতিরিক্ত খোঁচা বা তামাশা এড়ান, কারণ আপনার হাসি অন্যের জন্য বেদনার কারণ হতে পারে।
খাওয়া শুরু করার আগে বীসমিল্লাহ বলুন এবং সবাইয়ের জন্য দোয়া করুন।
শেষ কথা:
অতিথি আপ্যায়ন মানেই ভদ্রতা, আন্তরিকতা এবং আনন্দময় সম্পর্ক। সঠিক প্রস্তুতি, শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ এবং আন্তরিক মনোভাব মেনে চললে দাওয়াত শুধুমাত্র খাওয়ার অনুষ্ঠান নয়, বরং শিশু ও পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হয়ে ওঠে।

[223]


দৈনিক প্রথম সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক ঃ নাঈম মাহমুদ
কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক প্রথম সংবাদ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

শিরোনাম