
শারদীয় সাজবছর আবার ফিরে এসেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আমেজ এখন শহরজুড়ে। বাজারে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা, নতুন শাড়ি, গয়না এবং মেকআপের হিড়িক—সব মিলিয়ে নারীদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ চোখে পড়ার মতো। তবে প্রতিদিন একই সাজ নয়, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত সাজের মধ্যে কিছু পার্থক্য রাখা মানেই সৌন্দর্যের একটি নতুন মাত্রা।
ষষ্ঠীর দিন পূজার শুরু হয় শান্তভাবে। এদিন নারীরা সাধারণত হালকা ও আরামদায়ক পোশাক বেছে নেন। সালোয়ার-কামিজ বা হালকা সিল্কের শাড়ি পরা যায়। চুল বাঁধার ক্ষেত্রে পনিটেইল বা বেণি সবচেয়ে আরামদায়ক। চাইলে চুলে দু’একটি ফুল গুঁজে দিয়ে হালকা সাজে সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। মেকআপও হালকা রাখাই মানানসই। ত্বকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার বা বিবি ক্রিম ব্যবহার করা যায়। ঠোঁটের জন্য ন্যূড বা হালকা রঙের লিপস্টিক বেছে নিলে দিনের সাজ স্নিগ্ধ ও সতেজ দেখাবে।
সপ্তমীর দিন নারীরা একটু সজীব ও প্রাণবন্ত লুকের দিকে মন দেন। সাধারণত সুতির পোশাক বেশি পছন্দ করা হয়, যা দিনব্যাপী আরাম দেয়। মেকআপে হালকা আইশ্যাডো ব্যবহার করা যেতে পারে, ঠোঁটে থাকুক হালকা রঙ। চুলে খোঁপা বা ক্লাচার বাঁধা মানানসই। দিন শেষে সন্ধ্যার অঞ্জলিতে চাইলে চোখের সাজের মাত্রা একটু বাড়িয়ে দিতে পারেন, যা দেখতে আকর্ষণীয় মনে হয়।
অষ্টমীর দিন পূজার সবচেয়ে জমকালো সময়। কুমারীপূজা ও বিশেষ অঞ্জলির দিন নারীরা প্রায়শই সিল্ক, কাতান বা বেনারসি শাড়ি পরেন। দিনের সাজ হালকা রাখা যায়, রাতের সাজে চোখ ও ঠোঁটের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিছুটা ভারী সাজ ব্যবহার করা যায়। চুল খোলা রাখার সঙ্গে কপালে টিপ পরা একেবারে মানানসই। পুরো লুক যেন উৎসবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, তা নিশ্চিত করতে পোশাক ও গয়না মিলিয়ে সাজানো উচিত।
নবমীর দিন পূজার সবচেয়ে উজ্জ্বল রাত। এই দিন নারীরা প্রায়শই জামদানি, সিল্ক বা নিজস্ব পছন্দের শাড়ি বেছে নেন। গয়নায় বড় কানের দুল বা লেয়ার্ড নেকলেসের মাধ্যমে লুকটিকে আরও গ্ল্যামারাস করা যায়। মেকআপে চোখ ও ঠোঁটের রঙের মধ্যে কনট্রাস্ট রাখা মানানসই। সাজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আরাম ও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দশমীর দিন বিদায় ও সিঁদুর খেলার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। লাল-সাদা রঙের শাড়ি প্রচলিত হলেও নারীরা তাদের পছন্দমতো অন্যান্য রঙও বেছে নিতে পারেন। চোখের সাজে কাজল, আইলাইনার এবং স্মোকি লুক মানানসই। ঠোঁটের সাজ হালকা রাখলে চোখের ভারী সাজের সঙ্গে সমন্বয় বজায় থাকে। পূজার শেষ দিনে সাজ মানেই আবেগের প্রকাশ, তাই আরাম এবং সৌন্দর্য উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ।
পোশাকের সঙ্গে কেমন নেকলেস মানাবে, তা বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ। ভারী গড়নের জন্য লেয়ার্ড নেকলেস মানায়, আর পাতলা গড়নের জন্য বড় ঝুলের হার ভালো। ভি-নেক ব্লাউজে ছোট্ট লকেট মানানসই, গোল নেকের সঙ্গে চোকার ব্যবহার করা যায়। ওভারসাইজ পোশাকে সরু চেইন ভালো লাগে। নেকলেস বা গয়নার ধাতু সবসময় পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
মেকআপের আগে ত্বকের প্রস্তুতিও অপরিহার্য। মুখ পরিষ্কার করা, পোরস টাইট করার জন্য টোনার বা বরফ ম্যাসাজ, তারপর হাইড্রেটিং ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। স্কিনটাইপ অনুযায়ী ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য প্রোডাক্ট বেছে নিলে মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হয়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য প্রাইমার ব্যবহার বিশেষভাবে জরুরি।
শেষ পর্যন্ত শারদীয় সাজে ফুলের ঐতিহ্যও অপরিসীম। খোঁপায় রজনীগন্ধা, গাঁদা বা গোলাপের মালা মানানসই। খোলা চুলে ফুলের ব্রোচ ব্যবহার করা যায়। ফুলের রঙ এবং পোশাকের রঙ মিলিয়ে নিলে সাজ আরও নান্দনিক হয়। আধুনিক ফিউশন পোশাকের সঙ্গেও ফুল মানিয়ে যায় এবং উৎসবের আবহ আরও প্রাণবন্ত হয়।
শারদীয় দুর্গাপূজায় সাজ মানে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং নিজের আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ। পোশাক, মেকআপ, গয়না এবং ফুলের সঠিক সমন্বয়ই পূজার আসল আনন্দ।
বিষয় : দুর্গাপূজা নারী শারদীয় সাজ মেকআপ
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শারদীয় সাজবছর আবার ফিরে এসেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আমেজ এখন শহরজুড়ে। বাজারে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা, নতুন শাড়ি, গয়না এবং মেকআপের হিড়িক—সব মিলিয়ে নারীদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ চোখে পড়ার মতো। তবে প্রতিদিন একই সাজ নয়, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত সাজের মধ্যে কিছু পার্থক্য রাখা মানেই সৌন্দর্যের একটি নতুন মাত্রা।
ষষ্ঠীর দিন পূজার শুরু হয় শান্তভাবে। এদিন নারীরা সাধারণত হালকা ও আরামদায়ক পোশাক বেছে নেন। সালোয়ার-কামিজ বা হালকা সিল্কের শাড়ি পরা যায়। চুল বাঁধার ক্ষেত্রে পনিটেইল বা বেণি সবচেয়ে আরামদায়ক। চাইলে চুলে দু’একটি ফুল গুঁজে দিয়ে হালকা সাজে সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। মেকআপও হালকা রাখাই মানানসই। ত্বকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার বা বিবি ক্রিম ব্যবহার করা যায়। ঠোঁটের জন্য ন্যূড বা হালকা রঙের লিপস্টিক বেছে নিলে দিনের সাজ স্নিগ্ধ ও সতেজ দেখাবে।
সপ্তমীর দিন নারীরা একটু সজীব ও প্রাণবন্ত লুকের দিকে মন দেন। সাধারণত সুতির পোশাক বেশি পছন্দ করা হয়, যা দিনব্যাপী আরাম দেয়। মেকআপে হালকা আইশ্যাডো ব্যবহার করা যেতে পারে, ঠোঁটে থাকুক হালকা রঙ। চুলে খোঁপা বা ক্লাচার বাঁধা মানানসই। দিন শেষে সন্ধ্যার অঞ্জলিতে চাইলে চোখের সাজের মাত্রা একটু বাড়িয়ে দিতে পারেন, যা দেখতে আকর্ষণীয় মনে হয়।
অষ্টমীর দিন পূজার সবচেয়ে জমকালো সময়। কুমারীপূজা ও বিশেষ অঞ্জলির দিন নারীরা প্রায়শই সিল্ক, কাতান বা বেনারসি শাড়ি পরেন। দিনের সাজ হালকা রাখা যায়, রাতের সাজে চোখ ও ঠোঁটের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিছুটা ভারী সাজ ব্যবহার করা যায়। চুল খোলা রাখার সঙ্গে কপালে টিপ পরা একেবারে মানানসই। পুরো লুক যেন উৎসবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, তা নিশ্চিত করতে পোশাক ও গয়না মিলিয়ে সাজানো উচিত।
নবমীর দিন পূজার সবচেয়ে উজ্জ্বল রাত। এই দিন নারীরা প্রায়শই জামদানি, সিল্ক বা নিজস্ব পছন্দের শাড়ি বেছে নেন। গয়নায় বড় কানের দুল বা লেয়ার্ড নেকলেসের মাধ্যমে লুকটিকে আরও গ্ল্যামারাস করা যায়। মেকআপে চোখ ও ঠোঁটের রঙের মধ্যে কনট্রাস্ট রাখা মানানসই। সাজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আরাম ও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দশমীর দিন বিদায় ও সিঁদুর খেলার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। লাল-সাদা রঙের শাড়ি প্রচলিত হলেও নারীরা তাদের পছন্দমতো অন্যান্য রঙও বেছে নিতে পারেন। চোখের সাজে কাজল, আইলাইনার এবং স্মোকি লুক মানানসই। ঠোঁটের সাজ হালকা রাখলে চোখের ভারী সাজের সঙ্গে সমন্বয় বজায় থাকে। পূজার শেষ দিনে সাজ মানেই আবেগের প্রকাশ, তাই আরাম এবং সৌন্দর্য উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ।
পোশাকের সঙ্গে কেমন নেকলেস মানাবে, তা বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ। ভারী গড়নের জন্য লেয়ার্ড নেকলেস মানায়, আর পাতলা গড়নের জন্য বড় ঝুলের হার ভালো। ভি-নেক ব্লাউজে ছোট্ট লকেট মানানসই, গোল নেকের সঙ্গে চোকার ব্যবহার করা যায়। ওভারসাইজ পোশাকে সরু চেইন ভালো লাগে। নেকলেস বা গয়নার ধাতু সবসময় পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
মেকআপের আগে ত্বকের প্রস্তুতিও অপরিহার্য। মুখ পরিষ্কার করা, পোরস টাইট করার জন্য টোনার বা বরফ ম্যাসাজ, তারপর হাইড্রেটিং ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। স্কিনটাইপ অনুযায়ী ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য প্রোডাক্ট বেছে নিলে মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হয়। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য প্রাইমার ব্যবহার বিশেষভাবে জরুরি।
শেষ পর্যন্ত শারদীয় সাজে ফুলের ঐতিহ্যও অপরিসীম। খোঁপায় রজনীগন্ধা, গাঁদা বা গোলাপের মালা মানানসই। খোলা চুলে ফুলের ব্রোচ ব্যবহার করা যায়। ফুলের রঙ এবং পোশাকের রঙ মিলিয়ে নিলে সাজ আরও নান্দনিক হয়। আধুনিক ফিউশন পোশাকের সঙ্গেও ফুল মানিয়ে যায় এবং উৎসবের আবহ আরও প্রাণবন্ত হয়।
শারদীয় দুর্গাপূজায় সাজ মানে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং নিজের আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ। পোশাক, মেকআপ, গয়না এবং ফুলের সঠিক সমন্বয়ই পূজার আসল আনন্দ।
[283]
আপনার মতামত লিখুন